বাদাম চাষে কৃষকের মুখে হাসি

প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৬ সময়ঃ ১১:৩৮ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১১:৪৭ পূর্বাহ্ণ

তোফায়েল হোসেন জাকির

zakir 1গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকা ও চরাঞ্চলে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। এই এলা্কার কৃষকদের বাদাম চাষে এবার বাম্পার ফলন হয়েছে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ফুলছড়ি উপজেলার চরাঞ্চলে এবার ৩শ ২০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ হয়েছে। চলতি মৌসুমে বাদামের দাম ও ফলন ভাল হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।

ফুলছড়ি উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চল নদের বুকজুড়ে অসংখ্য ছোট-বড় চর। আর এসব বালুচরে মাইলের পর মাইল বাদামের জমি। সাদা বালুর জমিতে সবুজ আর সবুজে ছেয়ে গেছে লতানো বাদামের গাছে।

প্রতিটি লতানো বাদাম গাছের মুঠি ধরে টান দিলেই উঠে আসছে থোকা থোকা সোনালি রঙের বাদাম। এ যেন বালুর নিচে লুকিয়ে থাকা গুপ্তধন।

উপজেলার উড়িয়া ইউনিয়নের কালাসোনা, কাবিলপুর, রতনপুর, কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের সাতারকান্দি, রসুলপুর, হাড়ডাঙ্গা, ফজলুপুর ইউনিয়নের খাটিয়ামারী, চন্দনস্বর, কাউয়াবাঁধা, চিকিরপটল, তালতলা, এরেন্ডাবাড়ী ইউনিয়নের জিগাবাড়ী, হরিচন্ডি, বুলবুলির চর, ফুলছড়ি ইউনিয়নের খোলাবাড়ী, বাজে ফুলছড়ি, টেংরাকান্দি, দেলুয়াবাড়ী, গজারিয়া ইউনিয়নের জিয়াডাঙ্গা, গলনাসহ চরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, চরের জমিতে এবার ব্যাপকভাবে বাদামের চাষ করা হয়েছে।

বাদাম পরিচর্যায় খরচ ও সময় দুটোই কম লাগে। এসব চরে বাসন্তী, সিংগা সাইস্টোর, বারী চিনাবাদাম-৫, বারী চিনাবাদাম-৬ সহ স্থানীয় জাতের বাদামের আবাদই বেশি করা হয়েছে। কৃষাণী ও কিশোর-কিশোরীরা গাছ থেকে বাদাম ছাড়িয়ে স্তুপ করে রাখছেন।

প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষিরা জমি থেকে বাদাম হাটে নিয়ে বিক্রি করছেন। বাদাম চাষ করে চরাঞ্চলের প্রায় ২০ হাজার কৃষক পরিবারে ফিরে এসেছে সচ্ছলতা। দুর হয়েছে নিত্য অভাব অনটন। তাদের মলিন মুখে ফুটেছে হাসি। চরের বালুতে প্রতি বিঘা জমিতে বাদাম হচ্ছে ২০-২৪ মণ। প্রতিমণ কাঁচা বাদামের বাজার মূল্য ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা।

উপজেলার দেলুয়াবাড়ী গ্রামের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক জানান, বালু মাটিতে অন্য কোন ফসল উৎপাদন করে বাদামের সমপরিমাণ লাভ হয় না। অন্য ফসল উৎপাদনের চেয়ে বাদাম উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় চরের সবাই বাদামের চাষ করে।

বাদাম রোপনের পর অন্য ফসলের মতো কোনো পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। নেই রাসায়নিক সারের ব্যবহার। বীজ রোপণ আর পরিপক্ক বাদাম উঠানোর লেবার খরচ ছাড়া তেমন কোনো খরচ নেই বললেই চলে। একটি ফসলেই আমাদের সারা বছরের সংসার চলে।

ফজলুপুর ইউনিয়নের খাটিয়ামারী চরের কৃষক আব্দুর রশিদ জানান, তিনি এ বছর দুই একর জমিতে বাদাম আবাদ করেছিলেন। এ বছর বাদামের বাম্পার ফলন হয়েছে। ছয় বিঘা জমিতে বাদাম তুলে পেয়েছেন ১শ৩০ মণ। অন্যান্য ফসল আবাদের চেয়ে বাদাম আবাদে পরিশ্রম ও খরচ অনেক কম পড়ে।

বুলবুলির চরের কৃষক খবির মন্ডল, সামাদ খাঁ ও খোলাবাড়ী গ্রামের শাহা আলম প্রমূখ বলেন, এ বছর তারা বাদাম আবাদ করে ভালো ফলন ও দাম পেয়েছেন। গুনগত মান ভাল হওয়ায় এ অঞ্চলের বাদামের প্রচুর চাহিদা রয়েছে।

দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাদাম ব্যবসায়ীরা বাদাম কিনতে আসেন। ফুলছড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ তাহাজুল ইসলাম জানান, প্রহ্মপুত্র নদের চরে এ বছর বাদামের আবাদ ও উৎপাদন ভাল হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাদামের দাঁনা পুষ্ট হয়েছে।

এছাড়া বাদাম গাছে তেমন কোন রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ ছিল না। ফলে কৃষকেরা বাদামের বাম্পার ফলন পেয়েছেন।

 

 

প্রতিক্ষণ/এডি/আস

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G